বাংলাদেশের
প্রেক্ষাপটে অনেকেই সরকারি চাকরিকে শ্রেষ্ঠ
চাকরি মনে করেন।
কিন্তু যদি প্রশ্ন করা
হয়, কেন সরকারি চাকরি
শ্রেষ্ঠ চাকরি, তাহলে যে
উত্তর পাওয়া যাবে সেগুলো
কোনো কোনো ক্ষেত্রে ঠিক
গ্রহণযোগ্য নয়। এমনকি
কারণগুলো কোনো কোনো ক্ষেত্রে
উল্লেখযোগ্যও নয়। তাহলে
ভালো চাকরি বলতে আমরা
আসলে কী বুঝব? ভালো
চাকরির বৈশিষ্ট্য কী হওয়া উচিত?
ভালো চাকরি বলতে অনেকেই যা মনে করেন: অফিসে বসে শীতাতপ
নিয়ন্ত্রিত কক্ষে কাজ করতে
হয় (আসলে কাজ কিছুই
না, হাজিরা দিলেই চলে)। আধুনিক
ইন্টেরিয়র। আলাদা
রুম, টেবিল-চেয়ার, আলাদা
ফোন। অফিসের
বাইরে রোদ-বৃষ্টিতে ঘোরাঘুরির
কোনো কাজ নেই।
* বেতন যা প্রয়োজন তার দ্বিগুণ। তা ছাড়া মোবাইল ফোনের বিল অফিস দেয়।
* অফিস ৯টা থেকে ৫টা। ছুটির দিনে অফিসে আসার কোনো সম্ভাবনা নেই।
* সপ্তাহে দুদিন ছুটি। শুক্র ও শনি।
* বেতনের পাশাপাশি বোনাস, ভাতা, ইনসেনটিভ, ওভারটাইম, প্রভিডেন্ট ফান্ড এবং এ বিষয়ক আর যা যা হতে পারে তার সবই আছে।
* গাড়ি এসে বাসা থেকে নিয়ে যায়, আবার বাসায় পৌঁছে দিয়ে যায়।
* দুপুরে খাওয়ার জন্য অফিসে ক্যান্টিন আছে, বাসা থেকে খাবার নিতে হয় না।
* প্রশাসন কড়াকড়ি নয়। মাঝে দেরি করে গেলেও বস কড়া কথা বলেন না। উপরন্তু চাইলেই ছুটি পাওয়া যায়। এ ছাড়া বার্ষিক ছুটি, অসুস্থ থাকার ছুটি, নৈমিত্তিক ছুটি ও অন্যান্য সব ছুটির ব্যবস্থা আছে। ছুটি না নিলে টাকা পাওয়া যাবে। বার্ষিক ছুটি নিলে ছুটি কাটানোর ভাতা পাওয়া যাবে।
* মেয়েদের ছয় মাস মাতৃত্বকালীন ছুটিসহ বাচ্চাদের জন্য অভ্যন্তরীণ ডে-কেয়ার। অসুস্থ হয়ে নিজে হাসপাতালে ভর্তি হলে সব খরচ অফিসের। আর নিকটাত্মীয় ভর্তি হলে ৭৫ শতাংশ খরচ অফিসের।
* প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা হোক বা না হোক মাসের ৫ তারিখে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন প্রস্তুত। উপরন্তু বদলি হওয়ার আশঙ্কা নেই। সেই সঙ্গে বছর বছর পদোন্নতি, নইলে বেতন তো বাড়বেই।
উপরোলি্লখিত বৈশিষ্ট্যগুলো এক সময় ভালো বা শ্রেষ্ঠ চাকরির মাপকাঠি হিসেবে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু বর্তমানে শ্রম আইন অনুযায়ী এর অনেক বৈশিষ্ট্যই অত্যাবশ্যক। ভালো বা মন্দ বলে কিছু নেই। এটা শ্রমিক, কর্মচারী, কর্মকর্তাদের অধিকার। সময় পাল্টেছে, মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টেছে, ভালো চাকরির মাপকাঠিও আরো আধুনিক হয়েছে। কাজ করতে হবে না; কিন্তু অনেক বেতন পাওয়া যাবে_এটা একজন শিক্ষিত ও মেধাবী কর্মকর্তার কাছে ভালো চাকরি হতে পারে না।
ভালো চাকরির ক্ষেত্রে যেসব বৈশিষ্ট্য বিবেচনায় রাখা উচিত
* প্রতিষ্ঠানের খ্যাতি বা প্রতিষ্ঠান কতটা বিখ্যাত এটা একটা ভালো চাকরির সাধারণ মাপকাঠি।
* আপনার ক্যারিয়ারের সঙ্গে আপনার পদ কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ। ধরুন, আপনি বিপণন বিষয়ে পারদর্শী। প্রতিষ্ঠান আপনাকে যদি দীর্ঘদিন ধরে ভোক্তাসেবা বিভাগে নিযুক্ত রাখে, আপনি কি এমন অবস্থায় এ চাকরিকে ভালো চাকরি বলবেন? নিশ্চয়ই না।
* আপনার পদ ও যোগ্যতার সঙ্গে সমন্বয় থাকা দরকার। আপনার কাজের অভিজ্ঞতা ও শিক্ষাগত যোগ্যতার সঙ্গে মানানসই না রেখে যদি দ্রুত পদোন্নতি দিয়ে আপনাকে ব্যবস্থাপক বা বিভাগীয় প্রধান করা হয়, তাতে সত্যিকার অর্থে আনন্দিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। বরং আতঙ্কিত হওয়ার অনেক কারণ আছে। প্রথমত, এই পদে একজনকে যে দক্ষতা প্রদর্শন করতে হয় তা আপনার নেই বলে এই পদে আপনার সফল হওয়া অনেক কঠিন। দ্বিতীয়ত, অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে গিয়ে একই পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের হারিয়ে দেওয়া আপনার জন্য একই কারণে কঠিন হবে। আবার যুক্তিসংগতভাবে এর চেয়ে নিচের পদেও নামতে পারবেন না। এ এক মহাবিপদ! ফলে যেসব প্রতিষ্ঠানে বা চাকরিতে যোগ্যতা যাচাই না করেই দ্রুত একের পর এক পদোন্নতি দেওয়া হয়, তা চাকরিজীবীর জন্য শুভ সংবাদ নয়।
* চাকরিতে কাজ করতে করতে আপনার শেখার সুযোগ থাকা চাই। এমন কাজ করছেন যেখানে আপনার আর শেখার কিছু নেই। একই কাজ মাসের পর মাস, বছরের পর বছর করেই যাচ্ছেন, নতুন কিছু শেখার নেই, সে চাকরি ভালো চাকরি হতে পারে না। দায়িত্ব একই হতে পারে; কিন্তু তাতে আপনার দক্ষতার স্তরের পরিবর্তন হতে হবে। দক্ষতার সঙ্গে সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পদোন্নতিও হতে হবে। তবেই তাঁকে ভালো চাকরি বলা যেতে পারে।
হঅফিসে নারী-পুরুষের একসঙ্গে কাজ করার পরিবেশ। বিশেষ করে নারী কর্মজীবীদের নিরাপত্তা, সম্মান ও আত্মমর্যাদার সঙ্গে কাজ করতে পারার সুযোগ খুব গুরুত্বপূর্ণ। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা বেশি বেতনের বা উচ্চতর পদবির চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ।
* আপনি যে কাজ পছন্দ করেন সে দায়িত্ব পেলেন কি না দেখে নেবেন। এমন কাজ খুব বেশি সময় ধরে করা কঠিন, যা আপনি পছন্দ করেন না। এতে আপনার পক্ষে নিজেকে উজাড় করে দিয়ে শ্রেষ্ঠ দক্ষতা ব্যবহার করা সম্ভব হয় না, প্রতিষ্ঠানেরও ক্ষতি হয়।
* আপনার বসের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কেমন? একজন অধস্তনের জন্য একজন ভালো বস অনেক বড় ব্যাপার। আপনার ক্যারিয়ার অনেকাংশেই তার ওপর নির্ভরশীল। একটি চাকরি ভালো কি না তা অনেকখানি নির্ভর করছে আপনি কতটা ভালো বসের অধীনে কাজ করছেন।
* আপনার সহকর্মী ও অধস্তনদের সামাজিক অবস্থান ও তাঁদের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক একটি ভালো চাকরির বিশেষ মাপকাঠি। তাঁদের সঙ্গে আপনার কতটা খাপ খায়।
* অফিসের ভেতরে ও বাইরে আপনার প্রশিক্ষণের সুযোগ থাকা চাই। নইলে আপনার শিক্ষা, অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা বাড়ার পথ রুদ্ধ। একটি ভালো চাকরিতে আপনার দক্ষতা বৃদ্ধির পথ হবে আকাশ জোড়া বিস্তৃত।
* আপনার ভবিষ্যৎ যাত্রা উত্তরোত্তর উন্নতির জন্য বর্তমান চাকরি কতটা সহায়ক, সেটা সবচেয়ে বিবেচ্য বিষয় হওয়া উচিত।
এমনই আরো অনেক খুঁটিনাটি বিষয় আছে, যা একটি ভালো চাকরির মানদণ্ড হতে পারে। যত কম কাজ, চাকরি তত ভালো - এ ধারণায় যাঁরা পথ চলছেন তাঁদের সময় এসেছে নিজেকে শুধরে নেওয়ার।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন