আজ
আমায় দেখতে আসবে।
এসব চিন্তায় গতরাতে তেমন একটা
ঘুমও হয়নি। সকালে
মা এসে একগাদা বাটা
হলুদ এনে হাতে-মুখে
লাগিয়ে দিলেন। দুপুরে
গোসল সেরে নতুন কাপড়-চোপড় পরলাম।
আয়নায় নিজের দিকে তাকিয়ে
কেমন লজ্জা লজ্জা লাগছিল। বিকেল
গড়াতেই মেয়েপক্ষের লোক হাজির।
না পাঠক, ভুল পড়েননি। শব্দটা
মেয়েপক্ষই। আমি
আনিস, মাঝারি উচ্চতার দোহারা
গড়নের একটা ছেলে, মাল্টি
ন্যাশনাল কোম্পানিতে মোটা বেতনের চাকরিও
করি। আমার
বা আমার পরিবারের নামে
কোনো বদনামও নেই সমাজে। সব
মিলিয়ে পাত্র হিসেবে আমি
মন্দ নই। নিশ্চয়ই
ভাবছেন, 'মেয়েপক্ষ' ছেলেকে দেখতে আসছে,
এ আবার কোন যুগ!
সে কথা না হয়
পরেই বলছি, আগে আমাকে
দেখার গল্পটা বলে নেই।
ইন্দোনেশিয়া ফেরত রইস মামা আমার গলায় নরমুণ্ডুর লকেট ঝুলিয়ে দিয়েছেন।
কারণ ইন্দোনেশিয়ার বিয়েতে উপজাতি ছেলেরা
কাটা মুণ্ডু পিঠে ঝুলিয়ে
রাখে, তা না হলে
মেয়েরা তাদের পছন্দ করে
না, বিয়েও করে না। মা
ক'দিন ধরে কনেপক্ষের
সামনে কীভাবে আদব লেহাজের
পরিচয় দিতে হবে তার
ফিরিস্তি দিতে দিতে আমার
কান ভারি করে ফেলেছেন। আর
বিবাহিত বন্ধুদের নানা টিপসে আমার
মোবাইলের চার্জ তো থাকতই
না। যা
হোক, বহু কিস্সার পর
আমি তাদের সামনে উপস্থিত
হলাম। বুকটা
ঢিপ ঢিপ করছে।
কী জানি কী হয়!
আমি ট্রে ভর্তি শরবতের
গল্গাসগুলো রাখার মুহূর্তে কী
জানি হলো, হাত কেঁপে
হুড়মুড়িয়ে সব গল্গাস মাটিতে
পড়ে খান খান।
তা দেখে কনেপক্ষের লোকেরা
নিজেদের মধ্যে গা টেপাটেপি
করে আবার কী জানি
বলাবলিও করতে লাগল।
যা হোক, হালকা কথাবার্তার
পর... পাঠকমণ্ডলী আমার মতো আপনারও
নিশ্চয়ই উপরোক্ত গল্পখানা শুনে বড্ড বিরক্ত। তাই
চলুন গল্পটার ফালতু অংশগুলো বাদ
দিয়ে শেষটায় কী হয়
তা শুনি। বর
দেখার পর্ব প্রায় শেষ। বয়স্ক
এক মহিলা আমার মাথায়। 'কী
মিষ্টি ছেলে গো' বলে
হাত বুলিয়ে দিলেন।
আমি পা ছুঁয়ে সবাইকে
সালাম করলাম। আমার
হাতে এক বুড়ো সালামির
কিছু টাকা গুঁজে দিল।
গল্পটা আমি এখানেই শেষ করতে পারতাম কিন্তু আরও কিছু বাকি আছে। তা বলার আগে দুটো জোক বলে নিই। জোকগুলো অতি অবশ্যই বিয়েসংক্রান্ত। প্রথমটি বিবাহ-পূর্ব ও দ্বিতীয়টি বিবাহ-উত্তর।
দুই বন্ধুর কথোপকথন :
_ কাজী সাহেব বিয়ে পড়ানোর সময় তুই নাকি বিয়ের মজলিস ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলি?
_ ইয়ে ... হ্যাঁ
_ কেন, হঠাৎ সাহস হারিয়ে গিয়েছিল বুঝি?
_ না ... হঠাৎ করেই সাহস ফিরে পেলাম।
এবার বিবাহ-উত্তর জোক। তা বলার জন্য সরাসরি জঙ্গলে ঢুকে যাই। এক জঙ্গলে ভালুক দম্পতি এক জিনির মুখোমুখি হয়ে পড়ল কোনোভাবে। জিনি বলল, 'তোমাদের দু'জনকে আমি একটা একটা করে দুটো বর দেবে। বল কে কী চাও?
পুরুষভালুক : আমি ছাড়া এ জঙ্গলের সব ভালুককে মেয়েভালুক করে দাও।
মেয়েভালুক : আমাকে পুরুষভালুক করে ওকে মেয়ে ভালুক করে দাও।
ধৈর্য্যশীল বুদ্ধিমান পাঠক, যারা এতক্ষণ ধরে এ বিশ্রী লেখাটি পড়েছেন ও মূল গল্পের শেষটুকু শোনার অপেক্ষা করছেন, তারা নিশ্চয়ই এতক্ষণে বুঝে গেছেন যে বিয়ের 'কনে দেখা' নিয়ে রম্য লিখতে বসে লেখক প্রথমে একটা সস্তা চমক দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। অতঃপর সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক দুটো জোক বলে লেখা চালিয়ে গেছেন এবং সবশেষে একটি গ্যাটিজ দিয়ে লেখাটা শেষ করতে চাইছেন।
প্রিয় পাঠক, সভ্য এ জগতে 'তথাকথিত প্রক্রিয়ায়' কনে দেখাটাই তো একটা নির্মম রসিকতা। ব্যাপারটা আমার এ লেখাটার মতোই বিদঘুটে ও বিরক্তিকর। একে নিয়ে কি আলাদাভাবে রম্যের প্রয়োজন আছে? আপনারাই বলুন!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন