বিয়ে নতুন জীবন

বিয়ে প্রত্যেকটি নরনারীর জীবনের কাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত ছোট ছোট স্বপ্নের পূরণ, আপনজনদের মনের চাহিদা আর সামাজিকতা সবকিছুর মিলনমেলার নামই বিয়ে আসুন বিয়ের কিছু গুরুত্বপূর্ণ অনুসঙ্গ সম্পর্কে জেনে নিই।
 
কনের শাড়ি
বিয়ের বাজার করতে গেলে প্রথমেই আসে বর-কনের পোশাকের কথা কেননা তার পরই সবকিছু ম্যাচিংয়ের বিষয় আসে বিয়ে আর বউভাতে একটু গর্জিয়াস শাড়িই বেশি মানায় বিয়েতে বউকে যেন মলিন না দেখায় খেয়াল রেখে শাড়ি কিনতে হবে আজকাল বিয়েতে জামদানি, টিস্যু, ক্রেপ, সিল্ক, মসলিন, নেটেড, কাতান বা বেনারসি সব ধরনের শাড়ি চলছে যার যার পছন্দ অথবা রুচি অনুযায়ী বিয়ের শাড়ি কিনছে


বাজারে কিছু শাড়ির সঙ্গে ওড়না পাওয়া যাচ্ছে আবার পছন্দ অনুযায়ী ওড়না অর্ডার দিয়ে বানিয়ে নিচ্ছে অনেকে এখন গাঢ় রংয়ের শাড়ি যেমন_ লাল, নীল, কমলা, মেজেন্টা, খয়েরি এসব শাড়িই বেশি চলছে শীতকাল বলে ফুলহাতার ব্লাউজ বানানো হচ্ছে বেশি আর এসব শাড়ির সঙ্গে শার্টিনের কাপড়ের পেটিকোট পরলে সুন্দর হয় শাড়ি পরার ওপরও অনেকটা সৌন্দর্য নির্ভর করে শাড়ি পরার ক্ষেত্রে কেউবা আদি ঢং আনছে, কেউবা আধুনিকতার ছোঁয়ায় শাড়ি পরছে

গুলশান আলমিরার ডিজাইনার টিংকু মনে করেন, বিয়ের শাড়িতে সাধারণত লাল বা গাঢ় রঙ নির্বাচন করা উচিত ছাড়া একটু হালকা-পাতলা মেয়েদের জন্য মসলিন আর ভারী মেয়েদের জন্য ক্রেপ জর্জেটের কাজ মানানসই
ডিজাইনার এমদাদ হকের মতে, শীতকালে ভারী লাল বেনারসি শাড়ি এবং অর্ডার দিয়ে ওড়না বানিয়ে নিলে শাড়িটি সুন্দর হবে খাটো মেয়েরা লম্বা পাড়ের শাড়ি পরলে একটু লম্বাটে দেখাবে
শাড়ি কেনার সময় বিবেচ্য বিষয়
প্রথমে শাড়ির জন্য বাজেট করে নিতে হবে, কেননা সাধ সাধ্যের মধ্যে থাকলে সবকিছুই সুন্দর মতো হয়
কনের গায়ের রঙ এবং উচ্চতার দিতে সতর্ক থাকতে হবে কেননা কনে শ্যামলা অথবা কালো হলে অনেক রঙই মানানসই হবে না
বিয়ের পার্টি দিনে নাকি রাতে হবে দিনেরবেলায় হলে হালকা রংয়ের এবং রাতের পার্টি হলে একটু গাঢ় গ্গ্নসি শাড়ি মানাবে
বর-কনের পোশাকে কিছুটা সামঞ্জস্য আনলে ভালো দেখাবে
বিয়ের শাড়ি গরমের দিনে হলে হালকা রঙ এবং শীতের দিনে গাঢ় রঙ হলে ভালো হয়
বিয়ের শাড়ি ১০-৩০ হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যাবে আজকাল সব মার্কেটেই বিয়ের শাড়ি পাওয়া যাচ্ছে ছাড়া অঞ্জন', কে কদ্ধ্যাফট, আড়ং, ড্রেসিডেলসহ বিভিন্ন শোরুমে বিয়ের শাড়ি পাওয়া যায় জামদানির জন্য ডেমরা বেনারসি শাড়ির জন্য মিরপুর বেনারসি পল্লী যাওয়া যেতে পারে ছাড়া নিউমার্কেট, গাউসিয়া মৌচাক মার্কেটেও বিয়ের শাড়ি পাওয়া যায়
বরের সাজ
বিয়েতে কনের সাজের পাশাপাশি বরের সাজে বেশ পরিবর্তন এসেছে পরিবর্তনের লুকে রাজকীয় পোশাকের ব্যবহার বেড়েছে বেশি তবে কনের পোশাকের সঙ্গে মিল রেখেও অনেকে বিয়ের পোশাক তৈরি করছেন নিয়ে লিখেছেন...
বিয়েতে বর অনুষঙ্গের প্রধান আকর্ষণ শেরওয়ানি শেরওয়ানির রঙ, ঢঙ বা আকৃতি কতটুকু হবে বা পোশাকের মান বরকে কতটুকু সাজিয়ে তুলতে পারবে, নিয়ে শেরওয়ানির হাল ফ্যাশনে অনেক পরিবর্তন এসেছে
শেরওয়ানি
শেরওয়ানি যদি রেডিমেড না কিনে নিজের মতো করে বানিয়ে নিতে চান তবে শেরওয়ানি তৈরিতে দেশি তসর, মটকা, কাতান, ধুপিয়ান, অ্যান্ডি বা মসলিন কাপড় ব্যবহার করতে পারেন কাপড়ের রঙের ক্ষেত্রে নীল, বেগুনি, মেরুন, সোনালী, সোনালীর সঙ্গে নীল, সবুজ, কালো বা খয়েরি রঙ ব্যবহার করতে পারেন শেরওয়ানিতে জমিনের কারচুপি রঙের পাশাপাশি ক্যাজুয়াল সাজটাও ফুটিয়ে তুলতে পারেন আবার কনের শাড়ির সঙ্গে মিল রেখেও শেরওয়ানি তৈরি করতে পারেন শেরওয়ানির ঝুল লং বা সেমি লং রাখতে পারেন শেরওয়ানির হাতা লম্বা বা কোয়ার্টার করেও তৈরি করতে পারেন শেরওয়ানিটি ফুটিয়ে তুলতে বিভিন্ন জরি, চুমকি, পুঁতি, পাথর, বিভিন্ন শেড, স্প্রিং, কলকা ইত্যাদি দিয়ে কাজ করিয়ে নিতে পারেন শেরওয়ানির গলা, বোতাম স্টেপ, দু'হাতা এবং ঝুলের কোনে আকর্ষণীয় কিছু কাজের দ্বারা শেরওয়ানিটি ফুটিয়ে তুলতে পারেন তবে সব শেরওয়ানি জুড়ে নকশা না করাই বেশি দৃষ্টি নন্দনীয়
এখানকার পোশাকগুলো বিয়ে ছাড়াও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পরার উপোযোগী করে তৈরি করা হয় তাই শেরওয়ানির পরিবর্তে বিয়েতে বেছে নিতে পারেন ব্র্যান্ডের প্রিন্সকোট অথবা নানা রঙ ঢঙের জমকালো পাঞ্জাবি আর পাঞ্জাবির সঙ্গে উত্তরীয় তো থাকছেই
শেরওয়ানির অনুষঙ্গ : শেরওয়ানির সঙ্গে মিল রেখে আরও বেশ কয়েকটি অনুষঙ্গ আসতে পারে শেরওয়ানির সঙ্গে চুড়িদার সালোয়ার বিশেষ লুক হিসেবে ব্যবহার হতে পারে ছাড়াও কাবুলি সালোয়ার, চোস্ত, তসর বা ট্রাউজার বরের সালোয়ার হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে বরের শেরওয়ানির রঙের সঙ্গে মিল রেখে পাগড়িরও প্রয়োজন হয় রেডিমেট না কিনে বৈচিত্র্যময় পাগড়ি তৈরি করে নিতে পারেন পাগড়িতে রাখতে পারেন কয়েকটি রঙিন কাপড়ের মিশ্রণ আবার শাড়ির কাপড় দিয়েও পাগড়ি তৈরি করতে পারেন পাগড়ির ঝুল লং বা সেমি লং হতে পারে তবে তৈরি পাগড়ির মান শেরওয়ানির সঙ্গে যেন মানানসই হয় সেদিকে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে চাইলে বরের সঙ্গে একটি ছোট রুমাল রাখতে পারেন
বরের পায়ের জন্য প্রয়োজন নাগরা নাগরার রঙ শেরওয়ানির রঙের সঙ্গে মিল রেখে কেনাই ভালো ক্ষেত্রে মেরুন, বাদামি, কালো, খয়েরি বা হালকা সোনালি রঙের নাগরা নির্বাচন করতে পারেন
কোথায়, দাম কত : বিয়ের পোশাক এর অনুষঙ্গ যাবতীয় পণ্য রাজধানীর গুলশান, বনানী, উত্তরা, ধানমণ্ডি, বসুন্ধরা সিটি, বেইলি স্টার, ফরচুন, টুইনটাওয়ার, মৌচাক, চাঁদনীচক নিউমার্কেটের বিভিন্ন দোকানে পেতে পারেন ফ্যাশন হাউসগুলোর মধ্যে অঞ্জন', রঙ, বাংলার মেলা, ওটু, লুবনান, ইনফিনিটি থেকেও বিয়ের শেরওয়ানি এর অনুষঙ্গ পেতে পারেন ডিজাইনের ওপর নির্ভর করে শেরওয়ানির দাম পড়বে হাজার টাকা থেকে ৩২ হাজার টাকা, পাঞ্জাবি হাজার ৩০০ থেকে ১৩ হাজার ৭০০ টাকা, প্রিন্সকোট ১৫ হাজার থেকে ২৭ হাজার টাকা পর্যন্ত পাগড়ি ৪০০ থেকে হাজার ৮০ টাকা, নাগরা হাজার ৩৫০ থেকে হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত আর বিয়ের পোশাক ফর্মায়েশ দিয়ে তৈরি করিয়ে নিতে চাইলে দেশি ফ্যাশন হাউস যেমন_ বাংলার মেলা, রঙ, অঞ্জন' কেক্রাফট থকেও পোশাক তৈরি করিয়ে নিতে পারেন মৌচাক, টুইনটাওয়ার, ফরচুন, ওয়েস্টার্ন প্লাস, হাতিরপুল বা চাঁদনীচকের দোকানগুলোতে শেরওয়ানির দাম পড়বে হাজার ৫০০ থেকে ১২ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত, পাঞ্জাবি হাজার ৫০০ থেকে হাজার টাকা পর্যন্ত, পাগড়ি ৪০০ থেকে ৯০০ টাকা নাগরা ২০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত ছাড়াও রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের দর্জি দোকানগুলো থেকে ফরমায়েশ দিয়ে বিয়ের পোশাকগুলো তৈরি করিয়ে নিতে পারবেন কাপড়ের মজুরি অবশ্যই কাপড়ের কাজ এর ডিজাইনের ওপর নির্ভর করবে

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন