মেদ
ভূড়ি আমরা কেউ চাই না। যারা পাতলা গড়নের তাদের জন্য আরো বড় সমস্যা। কিছু মেদ লুকিয়ে থাকে দেহের ভেতরে,গোপনে। আন্তরযন্ত্রের চার পাশে। নীরব একটি ঝঁকি হয়ে থাকে প্রাণ সংশয়ের। সেটা আমরা জানি বা না জানি। অনেকেরই থাকে মেদ ভুড়ি। হয়ত আয়তন বড় নয় শরীরের কিন্তু ভেতরে আছে মেদ। কোথা থেকে এলো এই মেদ। শরীরের জন্য কেমন অহিতকর। কি করাই বা যায় এ নিয়ে। এনিয়ে আরও কথা বলার আগে বলি, মেদ নিয়ে আতংক নয়। শরীরের জন্য কিছু মেদতো চাই-ই চাই। প্রশ্ন হলো কোথায় জমা এই মেদ? ভূগোল জানতে হবে মেদের অবস্থান জানা চাই- দেখা গেলো না তবুও।
ভূড়ি আমরা কেউ চাই না। যারা পাতলা গড়নের তাদের জন্য আরো বড় সমস্যা। কিছু মেদ লুকিয়ে থাকে দেহের ভেতরে,গোপনে। আন্তরযন্ত্রের চার পাশে। নীরব একটি ঝঁকি হয়ে থাকে প্রাণ সংশয়ের। সেটা আমরা জানি বা না জানি। অনেকেরই থাকে মেদ ভুড়ি। হয়ত আয়তন বড় নয় শরীরের কিন্তু ভেতরে আছে মেদ। কোথা থেকে এলো এই মেদ। শরীরের জন্য কেমন অহিতকর। কি করাই বা যায় এ নিয়ে। এনিয়ে আরও কথা বলার আগে বলি, মেদ নিয়ে আতংক নয়। শরীরের জন্য কিছু মেদতো চাই-ই চাই। প্রশ্ন হলো কোথায় জমা এই মেদ? ভূগোল জানতে হবে মেদের অবস্থান জানা চাই- দেখা গেলো না তবুও।
শরীরে মেদের অবস্থান
সব
মেদই এক রকম নয়। ওষেক
করেস্ট স্কুল অব মেডিসিনের
প্যাথলজির অধ্যাপক ড:ক্যারল সিভলি
বলেন, ভিন্ন ভিন্ন স্থানে
এই মেদের অবস্থান এবং
আচরণও ভিন্ন ভিন্ন।
আর মেদের এই আচরণই
প্রভাব ফেলে শরীরের হিত
অহিতের উপর। মানুষ
শরীরের মেদগ জমা করে
দু'ভাবে। যেমন-
১. ঠিক ত্বকের নিচে, উরু, কোমর, নিতন্ত ও পেট। এটি ত্বকের নিচে মেদ।
২. আরও অনেক গভীরে দেহের প্রধান আন্তরযন্ত্র যেমন- হূদযন্ত্র, ফুসফুস, পাচকনল ও যকৃতের চারপাশে মেদ, বুকে, পেটে ইত্যাদি।
ত্বকের নিচে মেদ দৃশ্যমান কিন্তু আন্তরযন্ত্রের চারপাশে মেদ দৃশ্যমান নয়। যদিও মানুষ এই দৃশ্যমান মেদ নিয়ে বড় ভাবনা করেন তবে ভেতরের মেদ, লুকানো চর্বি, মানুষের দেহের আয়তন যাই হোক না কেন এর বড় হুমকি আছে তা অনেকেই জানি না।
অন্যান্য দেহ যন্ত্রের মতই মেদ
মেদ
অলস হয়ে বসে থাকে
না। কাজ
করে অন্ত:ক্ষরা দেহ
যন্ত্রের মত বলেন, ওয়েক
করেস্ট স্কুল অব মেডিসিনের
এনডোক্সিনোলজি ও মেটাবলিজমের সহকারী
অধ্যাপক ডা: ক্রিস্টেন হেয়ারস্টন। হেয়ারস্টন
বলেন, আন্তরযন্ত্রের চারধারে মেদের কুশন।
এছাড়া এথেকে নি:সৃত
হয় নানা রকম বাজে
জিনিষও বটে। পাশের
যন্ত্রগুলো তো সে সব
শুষেও নেয়। যেমন-
আন্তরযন্ত্রের মেদ কোষগুলো নিসৃত
করে প্রদাহ জনক বস্তু
যা থেকে হতে পারে
ইনসুলিন রেজিস্টেস, এমনকি নানা রকম
ক্যান্সারের সম্ভাবনাও সৃস্টি হতে পারে। পেটের
গভীরে এমন মেদ বাহুল্য
থাকলে উচ্চ রক্তচাপ, জরায়ু
ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক বাড়ে।
কিভাবে দেহে মেদ জমা হয়
মেদ
প্রত্যেকেরই পেটের ভেতরে দেহযন্ত্রের
চারপাশে আছে। তবে
শরীরের ওজন যাই হোক,
আয়তন ও যাই হোক। ওজন
বাড়ে ত্বকের নিচে ও
দেহযন্ত্রের চারপাশে মেদও জমা হয়। শরীরের
কোথায় মেদ জমা হবে
তা নির্ভর করে বংশগতি,
জীবন যাত্রার ধরন, মানসিক চাপ,
নিদ্রা, বয়স, জেন্ডার এসব
বিষয় নির্ধারণ করে দেহে চর্বির
অবস্থান। চল্লিশের
নিচে যেসব পুরুষের বয়স
এরা নারীদের চেয়ে পেটের ভিতরে
মেদ জমা করে বেশি। নারীরা
ঋতু বন্ধের পর শরীরে
মেদ জমা করে বেশি
পেটের ভিতরে। সবারই
মেদ জমে দু'টো
স্থানেই। তবে
সীমা অতিক্রম করলেই ভাবনার কথা। স্থূল
ব্যক্তির ক্ষেত্রে মেদ নিরাপদ স্থানে
জমা হবার জায়গা পায়
না। তাই
জমা হয় আন্তরযন্ত্রের চারপাশে। যেমন
হূদযন্ত্র ও যকৃতের চারপাশে। যারা
মদ্যপায়ী নন, তাদের ফ্যাটি
লিভার ডিজিজ তেমন একটা
হয় না। কিন্তু
স্থূলতা যত বাড়ছে, দেখা
যাচ্ছে মেদ ভান্ডার এত
পরিপূর্ণ যে মেদ তখন
জমা হয় আন্তরযন্ত্রের চারপাশে। হূদযন্ত্রের
চারপাশেও বেশ মেদ জমা
হয়।
কতখানি মেদ খুব বেশি
কতখানি মেদ খুব বেশি
মেদ
কোথায় জমা হচ্ছে তা
জানার উপায় হচ্ছে সিটি
স্ক্র্যান বা এম.আর.আই। তবে
জানার একটি সহজ উপায়ও
আছে। বেশিভাগ
বিশেষজ্ঞ বলেন, শরীরের ওজন
যাই হোক, নারীদের ক্ষেত্রে
কোমরের বেড় ৩৫ ইঞ্চির
বেশি হলে বা পুরুষের
ক্ষেত্রে ৪০ ইঞ্চির বেশি
হলে ধরে নিতে হবে
আন্তরযন্ত্রের মেদ পরিমাণ অত্যাধিক। কোমরের
মাপ নেয়া খুব সহজ। তবে
যাতে তা সঠিক হয়
এজন্য ন্যাশনাল হার্ট, লং ও
ব্লাড ইনস্টিটিউট কিছু পরামর্শ দিয়েছেন।
* সোজা
হেয় দাঁড়ান। মাপ
নেওয়ার আগে শ্বাস ছাড়ুন। শ্বাস
টেনে নেবেন না।
* তলপেটের
চারিদিকে টেপ বাঁধুন।
নাভি বরাবর যাবে টেপ।
* টেপের
নিচভাগ যেন হিপবোনের বা
শ্রেণীফলকের উপর ঘেষে যায়। এর
উপরে যেন মাপ নেওয়া
না হয়, চিকন হলেও।
* নিতে পারেন নিতম্বের চারপাশের মাপও। কোমর নিতম্ব অনুপাত মেদের বিবরণ সম্বন্ধে ধারণা পাওয়া যায় কোমন নিতম্ব অনুপাত পরিমাপ করেও। ওয়েস্টার্ন জার্নাল অব মেডিসিন অনুযায়ী নারীদের জন্য স্বাস্থ্যকর অনুপাত হলো ০.৮ পর্যন্ত এবং পুরুষের ০.৯ পর্যন্ত।
* নিতে পারেন নিতম্বের চারপাশের মাপও। কোমর নিতম্ব অনুপাত মেদের বিবরণ সম্বন্ধে ধারণা পাওয়া যায় কোমন নিতম্ব অনুপাত পরিমাপ করেও। ওয়েস্টার্ন জার্নাল অব মেডিসিন অনুযায়ী নারীদের জন্য স্বাস্থ্যকর অনুপাত হলো ০.৮ পর্যন্ত এবং পুরুষের ০.৯ পর্যন্ত।
নিতম্বের
মাপ নিতে-
* সোজা
হয়ে দাঁড়ান। টেপ
জড়িয়ে নিন নিতম্ব বরাবর। শ্রেণীফলকের
উচু স্থান বরাবর যেন
টেপটি যায়। কোমর
নিতম্ব অনুপাত পেতে:কোমরের
মাপকে নিতম্বের মাপ দিয়ে ভাগ
করে নিলে হয়।
বিএমআই, নাসপাতি আকৃতি বা আপেল আকৃতি অবয়ব বিএমআই। দৈহিক উচ্চতার সঙ্গে ওজনের সম্বন্ধ। তবে এ থেকে চর্বির অবস্থা সম্বন্ধে ধারণা পাওয়া যায় না। নাসপাতি আকৃতির দেহ অবয়বই ভালো। গুরুনিতম্ব ও স্থূল উরু বরং ভালো। আপেল শরীরের চেয়ে কোমর রেখা বেশি, এর বেড বেশি হলে আপেল আকৃতি ভালো নয় শরীরের জন্য। নাসপাতি ও আপেল আকৃতি বলতে বোঝানো হয়েছে যে, আপেল শরীর মানে তলপেটে মেদভূড়ি, আর এর মানে দেহের ভেতরে আন্তরযন্ত্রের চারপাশে মেদ যা ভালো নয় শরীরের জন্য।
মেদভূড়ি সম্বন্ধে কি জানবো
কি
করবো
সাধারণত:
স্বাস্থ্যকর ও আদর্শ ওজন
থাকা মানে আন্তরযন্ত্রের চারধারেও
রয়েছে স্বাস্থ্যকর মানের চর্বি।
কিন্তু বংশগতির প্রভাবে একজন লোক পাতলা
গডনের হলেও তার আন্তরযন্ত্রের
চারপাশে মেদ হতে পারে
অধিক পরিমাণে। স্থূললোক
ও আন্তরযন্ত্রের অতিরিক্ত মেদ যেমন তেমনি
পাতলা গডন লোকেরও বংশগতির
প্রভাব থাকলে আন্তরযন্ত্রের মেদ
থাকতে পারে বেশি।
থাকতে পারে পাতলা লোকেরও
উচুমান কোলেস্টেরল এবং ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের
জন্য উঁচুমান রক্ত সুগার।
গবেষখ ড: টুয়োমাস কিলপামেন
বলেন, একজন চিকন গড়নের
লোকের রক্তের কোলেস্টেরল ও
সুগার উঁচুমান থাকলে বুঝা যাবে
এদের পেটের ভেতর আন্তরযন্ত্রে
জমছে বাড়তি মেদ।
একজন পাতলা গড়নের লোকও
শুয়ে-বসে জীবন যাপন
করলে আন্তরযন্ত্রের মেদ জমে।
বৃটিশ মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিল দেখিয়েছেন যে, একজন চিকন
লোক কেবল খাদ্যবিধির সাহায্যে
ওজন বজায় রাখলে, ব্যায়াম
না করলে আন্তরযন্ত্রে মেদ
জমার সম্ভাবনা বেশি।
কেমন
করে নিয়ন্ত্রণ করা যায় আন্তরযন্ত্রের
মেদ
চারটি
চাকি কাঠি যেমন-ব্যায়াম,
খাওয়া-দাওয়া, নিদ্রা এবং
চাপ ব্যবস্থাপনার ব্যায়াম। ব্যায়াম
করে ওজন কমানো।
ওজন কমলে সব ধরণের
মেদই ঝরে। কঠোর
এরোবিক ব্যায়ামে ত্বকের নিচের ও
আন্তরযন্ত্রের মেদ ঝরে।
৩০ মিনিট কঠোর এরোবিক
ব্যায়াম সপ্তাহে অন্তত: চার দিন
করতে হবে। রেজিস্ট্যান্স
ট্রেনিং কমায় কেবল ত্বকের
নিচের মেদ। এ
নিয়ে কাজ করেছেন ডা:ক্রিস স্লেন্জ, কঠোর
ব্যায়ামের সংজ্ঞা দিয়েছেন।
সুস্থ সবল শরীরের মানুষের
জন্য জগিং এবং স্থুল
লোকের জন্য দ্রুত হাঁটা। একই
তীব্রতায় স্থির বাইকে ব্যায়াম
করলেও একই লাভ।
গবেষণায় দেখা গেছে নিষ্ক্রীয়
জীবন-যাপন করলে কালক্রমে
অনেক মেদ জমা হয়
আন্তরযন্ত্রে। যে
জীবন ধারায় মাঝারী ব্যায়াম
রয়েছে সপ্তাহে অন্তত: তিন দিন
এমন ব্যায়াম যদি করা হয়
৩০ মিনিট তাহলে আন্তরযন্ত্রের
মেদ বেশ কমে।
দৌঁড়ানো, হাঁটা, বাগান করা,
বাচ্চাদের সঙ্গে খেলা, জিমে
ব্যায়ামের প্রয়োজন নেই। জীবন
সক্রিয় রাখতে পারলেই ভালো। আন্তরযন্ত্রের
মেদ কেবল ঝরাবে এমন
বিশেষ খাদ্য নেই।
সুষম ও পরিমিত খাদ্য,
আঁশ সম্বৃদ্ধ খাদ্য ভালো দিনে
১০ গ্রামের বেশি দ্রবনীয় আঁশ। দুটো
ছোট আপেল বা এককাপ
সবুজ মটরশুটি, আধকাপ বীনস, অংকুরিত
ছোলা, আঁশ সম্বৃদ্ধ খাবার
খাওয়া উচিত নিয়মিত।
অতি
নিদ্রা ও নিদ্রা হিনতা
অতিনিদ্রা
বা খুব কম ঘুম
দুটোই ভালো নয়।
বিশেষ করে পেটের ভেতর
মেদ জমার ক্ষেত্রে।
দেখা গেছে যারা রাতে
৫ ঘন্টা বা এর
কম ঘুমান বা ৮
ঘন্টা বা এর চেয়ে
বেশি সময় ঘুমান তাদের
আন্তরযন্ত্রের মেদ বেশি জমে,
যারা গড়ে রাতে ৬-৭ ঘন্টা ঘুমান
তাদের তুলনায়। ঘুমই
যে একমাত্র কারণ তাই নয়,
অন্যতম কারণতো বটেই।
মানসিক চাপ
মানসিক চাপ
চাপ
মোকাবেলা একটি বড় কাজ। ব্যক্তিগত
জীবনে যে ক্রনিক চাপের
মুখোমুখি আমরা হই এবং
সামাজিক চাপ যেমন বৈষম্য। আমেরিকান
জার্নাল অব এপিমেডিওলজিতে প্রকাশিত
প্রবন্ধে বলা হলো আফ্রিকান,
আমেরিকান এবং শ্বেতকায়া রমনী
যারা বৈষম্যের শিকার হয়েছেন তাদের
আন্তরযন্ত্রে মেদ বেশি, যারা
বৈষম্যের শিকার হননি তাদের
তুলনায়। কেবল
বৈষম্য নয়, সামাজিক সব
ধরণের চাপ, শরীর এ
রকম চাপে সাড়া দেয়,
আন্তরযন্ত্রের চারপাশে মেদ জমে।
সমাজকে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন তবে
এর প্রতি সাড়া দেওয়াতে
পরিবর্তন আনা যেতে পারে
সোশাল সাপোর্ট, ধ্যানচর্চা, ব্যায়াম, চাপ মোকাবেলার এগুলো
হলো উপায়। বন্ধুত্ব,
আড্ডা সবই চাপ প্রশমন
করে। তবে
সবচেয়ে ভালো উপায় হলো
ব্যায়াম করা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন