হাড় ভাঙা প্রতিরোধে যা করণীয়


মানুষের জীবনের কোনো না কোনো সময় অন্তত একটি হাড় ভাঙার প্রবণতা দেখা যায় আঘাত ছাড়াও বিভিন্ন রোগের কারণে হাড় ভাঙতে পারে ছোটদের কিশোর বয়সে কবজির জোড়ার কাছে, নিম্ন বাহুর হাড়, কনুইর কাছে, ঊরুর হাড় কটির হাড় ভাঙে আবরণ শক্ত বিধায় হাড়ের ভাঙা টুকরাগুলো কাছাকাছি থাকে আঘাতের কারণে বড়দের হাড় অধিকাংশ সময় কয়েক টুকরায় বিভক্ত হয়ে দূরে সরে যায় বয়স্কদের হাড়ের ক্যালসিয়াম অন্যান্য উপাদান কমে যায় বলে অল্প আঘাতেই বা আপনাআপনি হাড় ভেঙে যায় কবজির জোড়ার হাড়, কটির জোড়ার হাড় মেরুদণ্ডের হাড়ের মধ্যে ধরনের প্রবণতা সবচেয়ে বেশি


হাড়ের টিউমার ক্যান্সার, ইনফেকশন, ওসটিওপোরোসিস, ওসটিওমালাসিয়া, ওসটিওপেটরোসিস, হরমোন সংক্রান্ত (পিটুইটারি, থাইরয়েড, এডরেনাল গোনাড) সমস্যা এবং বাত ব্যথার (রিউমাটয়েড অসটিও আর্থ্রাইটিস) রোগীরা হাড় ভাঙায় আক্রান্ত হয় বেশি ধূমপান মদপান, স্টেরয়েড খিচুনি প্রতিরোধক ড্রাগ সেবনকারী এবং হেপারিন থেরাপি পাওয়া লোকদের অল্প আঘাতেই হাড় ভেঙে যায় ছাড়া যক্ষ্মা রোগ, খাদ্যনালির রোগ (সিলিয়াক ডিজিজ), লিভারের (যকৃৎ) রোগ এবং খাদ্যনালি জরায়ুর অপারেশন হাড় ভাঙার প্রবণতা বাড়িয়ে দেয় সমীক্ষায় দেখা গেছে, যে মহিলারা শারীরিক গঠনে পাতলা, খাটো বয়স্ক তারা পুরুষদের তুলনায় হাড় ভাঙায় চারগুণ বেশি ভুগে

প্রতিরোধ : চলাফেরা ভ্রমণের সময় যথাসম্ভব সতর্কতা অবলম্বন করলে দুর্ঘটনা থেকে অনেকটা রেহাই পাওয়া যায় খেলাধুলার আগে-পরে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ স্ট্রেসিং এবং খেলার সময় সতর্কতা উপযুক্ত কলাকৌশলে হাড় ভাঙা থেকে মুক্ত থাকা যায় উপযুক্ত ব্যায়াম যেমন_ নিয়মিত হাঁটা, জগিং, সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করা এবং ওজন বহন করা হাড়কে মজবুত শক্তিশালী করে কিশোর বয়সে কায়িক পরিশ্রম করলে হাড়ের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং হাড় মোটা হয় ফলে বৃদ্ধ বয়সে হাড় কম ভাঙে সুষম খাদ্য এবং কিশোর বয়সে ১৩০০ মিলি গ্রাম, ৫০ বছর পর্যন্ত ১০০০ মিলি গ্রাম এবং ৫০ বছরের ঊর্ধ্বে ১২০০ মিলি গ্রাম ক্যালসিয়াম দৈনিক সেবন করা উচিত ধূমপান মদপান থেকে বিরত থাকা উচিত
করণীয় : আঘাত বা যে কোনো কারণেই হাড় ভাঙলে প্রাথমিক চিকিৎসার পর কারণ অনুসন্ধান করতে হবে ফ্র্যাকচারের প্রয়োজনীয় চিকিৎসার সঙ্গে সঙ্গে প্রাথমিক কারণের চিকিৎসা নিতে হবে আক্রান্ত অংশের এক্স-রে করে সহজেই ফ্র্যাকচার নির্ণয় করা যায় কিছু কিছু ক্ষেত্রে সঠিকভাবে ফ্র্যাকচারের আকৃতি নির্ণয় করতে এবং প্রাথমিক কারণ জানতে সিটি স্ক্যান, এমআরআই বোন স্ক্যানের সাহায্যে নিতে হয় হাড় ভাঙার সঙ্গে জোড়ার স্থানচ্যুতি এবং রক্তনালি স্নায়ু ইনজুরি থাকলে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে স্থানান্তর করতে হবে ভাঙা হাড়কে পূর্ণ বিশ্রামে রাখতে হবে, যাতে টিস্যু ইনজুরি কম হয় বরফের টুকরা টাওয়ালে নিয়ে বা ফ্রিজের ঠাণ্ডা পানি ইলাস্টিক ব্যাগে নিয়ে লাগালে ব্যথা ফোলা কমে আসবে আক্রান্ত অংশে প্লাস্টার বা স্পলিন্ট ব্যবহারে ফোলা ব্যথা কমে আসে ওপেন বা কমপাউন্ড ফ্র্যাকচার হলে বিশুদ্ধ গজ ব্যান্ডেজ বা কাপড় দিয়ে পেঁচিয়ে রাখতে হবে, যাতে রক্তক্ষরণ কম হয় এনালজেসিক বা ব্যথানাশক ওষুধ সেবনে ব্যথা নিরাময় হবে কমপাউন্ড ফ্র্যাকচার হলে অ্যান্টিবায়োটিক, টিটেনাস টক্সায়েড টিটেনাস ইমিউনোগোলোবিউলিন, স্যালাইন এবং প্রয়োজনে শরীরে রক্ত সঞ্চালন করতে হবে উল্লেখিত প্রাথমিক চিকিৎসার পর হাড় ভাঙার প্রয়োজনীয় (কনজারভেটিভ বা শল্য) চিকিৎসা করাতে হবে হাড়ের বিভিন্ন উপাদানের ক্ষয় পূরণের জন্য পরিমিত ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি বিসফোসফোনেট (এলেনড্রোনেট, ইটিড্রোনেট রাইসোড্রোনেট) সেবন, হরমোন পরিপূরক থেরাপি এবং রেলোক্সিফেন ক্যালসিটোনিনের প্রয়োজন হতে পারে

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন