ভালোবাসা মানে কি?

এই প্রশ্নটার উত্তর দিতে অনেককে শুনেছি একেকজন একেকভাবে ভালোবাসাকে সংজ্ঞায়িত করেছেন কারো কারো মতেএটি একটি আবেগ যার কারণে আমাদের কাউকে ভালো লাগে আবার কারো মতে, ‘কাউকে মন থেকে স্নেহ, মায়া, মমতা দেয়াই ভালোবাসাঅনেকে মতে, ‘ভালোবাসা হচ্ছে সিগারেটের মত, যার পরিণাম হচ্ছে পোড়া ছাই

অনেকে কাউকে দেখে পছন্দ হলে বলে ফেলেন, ‘আমি তাকে ভালোবেসে ফেলেছি।আসলে এটা ঠিক নয়। এটা ভালোবাসা নয়। এটা হচ্ছে ভালো লাগা

কাউকে ভালোবাসতে গেলে কয়েকটি ধাপ অতিক্রম করতে হয়। ভালোবাসার ধাপগুলো হলো:

এই ধাপগুলো সবার জন্য এক না- হতে পারে। কেউ কেউ ভালো লাগা থেকে সরাসরি যোগাযোগ বা ভালোবাসার ধাপে চলে যেতে পারেন। আবার অনেকে যোগাযোগ থেকে শুরু করে ভালোবাসায় যেতে পারেন। আবার অনেকে হয়তো Crush- এসেই শেষ! মূল কথা, এটি ফ্লেক্সিবল (পরিবর্তনশীল)

১ম ধাপভালো লাগা: ভালো লাগা বলতে বোঝায় ভালো লাগা আরকি। কাউকে খারাপ না লাগা। কাউকে পছন্দ হওয়া। কারো সাথে সময় কাটাতে ইচ্ছে করাআমরা প্রতিদিনই বিভিন্ন ছেলে-মেয়েকে দেখি। এদের মধ্যে অনেককেই আমাদের দেখে ভালো লাগে। এক্ষেত্রে বাহ্যিক যে সৌন্দর্য্য, সেটিই প্রাধান্য পায়। অনেক সময় চেহারার এক্সপ্রেশন (ভাবভঙ্গি), পোশাক-আশাক, কথা বলার ধরণ আমাদের ভালো লাগে। অনেকে ভালো লাগাকে ভালোবাসা বলে ভুল করেন। আসলে ভালোবাসা অনেক বড় জিনিস। এটি শুধুমাত্র বাহ্যিক সৌন্দর্য্যের উপর ভিত্তি করে সৃষ্টি না হওয়াটাই স্বাভাবিক। মনের চিন্তারও মিল থাকা জরুরীভালো লাগার রেশটা ভালো লাগা পর্যন্তই শেষ। যদি সেটা দীর্ঘায়িত হয় তখন তাহলে চলে যাবে পরবর্তী ধাপে

২য় ধাপ – Crush: Crush মানে হচ্ছে কাউকে ভুলতে না পারা। ভালো লাগাটা কাটতে না চাইলে তখন সেটা হয়ে যায় Crush. Crush হচ্ছে একটা অস্থায়ী অনুভূতি। কারো জন্য সাময়িক চাওয়া। এটাকে সময় দিলে এমনিতেই কেটে যায়। অক্সফোর্ড ডিকশনারিতে Crush –এর ভুক্তিতে উদাহরণ দেয়া আছে: He’s got a crush on his history teacher. সেই উদাহরণটির মতই বলা যায়, crush যে কোন সময় যে কোন অবস্থায়ই হতে পারে। টিচারের প্রতিও Crush হতে পারে, আবার বয়সে খুব বড় এমন কারো প্রতিও Crush হতে পারে। তবে এটা সিরিয়াস নাকি শুধুই সাময়িক আবেগ সেটাও ভেবে দেখার বিষয়

৩য় ধাপযোগাযোগ বা Communication: Crush-এর পরে এই ধাপটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যোগাযোগে যদি গলদ হয়ে যায় তাহলে আগের ধাপগুলোর যত বৈশিষ্ট্য ছিল, উপকার ছিল সব হারাতে হয়যোগাযোগ বলতে এক পক্ষের একটি কথা বা মনের ভাব অন্য পক্ষকে জানানো বোঝায়যোগাযোগ ফোনের মাধ্যমে, ইন্টারনেটের মাধ্যমে, সরাসরি দেখা করে, এসএমএসের মাধ্যমে বা অন্য কোনো মাধ্যমে হতে পারে। আর শুধু কথা বলাই যোগাযোগ নয়, মনের ভাব প্রকাশ করাও যোগাযোগের মধ্যে পড়ে। অনেক সময় দেখা যায় eye contact (চোখের চাহনি) অনেক কিছু বলে দেয়। আমাদের চোখেরও একটা ভাষা আছে। এই ভাষা দিয়ে আমরা অনেক কিছু বোঝাতে পারি। এবং এর জন্য চোখ টিপও দেয়ার প্রয়োজন হয় না, আমাদের মনের ভিতরের আবেগই এর জন্য যথেষ্টআমরা যখন কোনো কারণে আনন্দিত হই তখন আমাদের চোখে একরকম Spark দেখা দেয়, একটা অন্যরকম রূপ দেখা দেয়। অনেকে হাসলে মনে হয় যেন চোখও হাসছে। অনেক সময় একটা মুচকি হাসি দিয়েও অনেক কিছু বলা যায়। অনেক সময় নীরব থেকেও অনেক কিছু প্রকাশ করা যায়শুধু চোখে চোখ রেখেই সেটা সম্ভব হতে পারে

যোগাযোগ মানুষের মধ্যে দূরত্ব কমায়। আমরা যোগাযোগের আগে ভাবি অমুক লোকটা জানি কেমন। কিন্তু যোগাযোগের পর দেখি যে হয়তো লোকটি সেরকম নয়। ভালোবাসার জন্য যোগাযোগটা জরুরী। ভুল বোঝাবুঝি দূরে রাখতে যোগাযোগ রাখা অত্যন্ত প্রয়োজন

৪র্থ ধাপভালোবাসা: আবেগ, যেটি আমাদেরকে নতুনভাবে ভাবতে শেখায়, স্বপ্ন দেখতে শেখায়, ত্যাগ-তিতীক্ষা-ধৈর্য্য শেখায়। ভালোবাসা শুধুমাত্র প্রণয় থেকে হয় না। ভালোবাসা স্নেহ, মায়া, মমতা থেকেও আসে। নতুন একটি শিশুর জন্ম হলে মা তাকে লালন পালন করে। শিশুটি সময়ে অসময়ে জ্বালাতন করেকাঁদে, ঠিকমত ঘুমায় না, খায় না ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু এতকিছুর পরও যে কারণে মা তার সন্তানটিকে ফেলে রেখে যেতে পারে না তা হলভালোবাসাঅনেক সময় ভালোবাসা আসে শ্রদ্ধা, সম্মান থেকে। যেমন: আমরা আমাদের বাবা-মা, দাদা-দাদীকে শ্রদ্ধাভরে ভালবাসিপ্রণয় অর্থেই হোক, আর মায়া-মমতা-সম্মান অর্থেই হোক, ভালবাসা মানে হল কারো ভাল চাওয়া

প্রণয়ের দিক থেকে ভালোবাসাকে চিন্তা করলে দেখা যায় - যখন একটা ছেলে একটা মেয়েকে ভালোবাসে তখন তারা একে অপরের ব্যাপারে care করে, ভাবে। একজন আরেকজনের ব্যাপারে ছোটখাট বিষয় নিয়েও মাথা ঘামায়। একজন আরেকজনের ক্ষতি দেখতে পারে না বরং সবসময় তার ভাল চিন্তা করে। একজন আরেকজনকে মনে প্রাণে বিশ্বাস করে। একে অপরকে সবসময় দেখতে ইচ্ছে করে, একসাথে কাটানো প্রতিটি মুহূর্ত মনের ভিতর আগলে রাখতে ইচ্ছে করে। একজন আরেকজনকে দেখলে বুকের ভেতরে একটা শান্তির অনুভূতি সৃষ্টি হয়। একজন আরেকজনের দিকে তাকালে মনে হয় যেন, ‘দুচোখ ভরে দেখি।ভালোবাসা মানে জাস্ট আপন করে পাওয়াএকে অপরের প্রতি অধিকার সৃষ্টি

ভালোবাসার অন্যতম আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে Sacrifice (ত্যাগ স্বীকার করা) ভালোবাসার মানুষটির জন্য অনেক সুবিধা ছেড়ে দেয়া বরং অনেকটা আনন্দের বিষয় হয়ে থাকে। যেমন: বাবা-মায়েরা নিজেদের জন্য খরচ না করে সন্তানদের জন্য খরচ করে। বাবা-মায়েদের ভালোবাসা আসলে ভালোবাসার শ্রেষ্ঠ নিদর্শন

ভালোবাসা দেখানোর প্রয়োজন হয় না, ভালোবাসা এমনিতেই প্রকাশ পায়ভালোবাসার জন্য তাড়াহুড়ো করা উচিৎ নয়। বন্ধু বান্ধবরা যতই বলুকতুই এ্যাফেয়ার করিস না ক্যান? ব্যাকডেটেড কোথাকার!’ তাদের কথায় কান দিতে নেই। চাইলেই কাউকে ভালোবাসা যায় না। জোর করে কাউকে ভালোবাসা যায় না। এজন্য মনের ভেতর থেকে অনুভূতি তৈরি হওয়া প্রয়োজন

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন